
MBN24 ONLINE : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার বিষয়ক উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, যে সব গণমাধ্যম ফ্যাসিবাদের পক্ষে কাজ করেছে, তাদের মালিক-সম্পাদকদের জনগণের কাছ ক্ষমা চাওয়া উচিত, তাদের কৃতকর্ম প্রকাশ্যে আসা দরকার।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) অডিটোরিয়ামে ‘গণমাধ্যমে জুলাই ও তারপর’ শীর্ষক প্রকাশনা উৎসব ও আলোচনা সভায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। পিআইবি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মাহফুজ আলম বলেন, নতুন মিডিয়া দেওয়া নিয়ে হাহাকার দেখা যাচ্ছে। আমি যতদিন আছি, নতুন মিডিয়া দিয়ে যাব। পুরনো মিডিয়া আগের ন্যারেটিভ ফিরিয়ে আনছে। সেই চেনা মুখগুলো আবার দেখছি। সবই আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা যেটা করব, কোনোটা বন্ধ করিনি করবও না। কিন্তু নতুন মিডিয়া থাকবে পুরনোও থাকবে। আর যারা লড়াকু সাংবাদিকতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
তিনি আরও বলেন, বক্তব্যের বিরুদ্ধে বক্তব্যের লড়াই ও চিন্তার বিরুদ্ধে চিন্তার লড়াইয়ে আমরা যাব৷ আমরা মনে করি, আমরা অবশ্যই জয়ী হব৷এখানে কোনো ধোঁয়াশা রাখার কিছু নেই৷’
“মব ভায়োলেন্স” নিয়ে ন্যারেটিভ তৈরী করে কীভাবে এটিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ফলাফল হিসেবে গণমাধ্যমে দেখানো হচ্ছে, তা নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “মব ভায়োলেন্স জিনিসটা এখন এক বছর পরে এসে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সাথে মেলানো হচ্ছে।রাজনৈতিক সভা-সমাবেশকেও মব বলা হয়েছে। বিশেষ করে একটি দলের প্রধান নূরুল হক নূরকে মারধরের ক্ষেত্রে।
তিনি বলেন, “এই “মব ভায়োলেন্স” থেকে আরও অনেকগুলি ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে। ঘুরেফিরে বয়ানটা এমন এক জায়গায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, …আপনাদের মনে থাকবে, ৮ই আগস্টে, ৮ই আগস্টে বা ৬ আগস্ট হবে, সজীব ওয়াজেদ জয় কিন্তু একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, ‘‘মবোক্রেসি’’ বলে। আজকে বাংলাদেশকে ঘুরেফিরে ওই শব্দের ভিতর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা এখানে অনেক কিছু হয়তো সামাল দিতে পারি নাই ‘
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ্ বলেন, মবেরও তো একটা সমাজতত্ত্ব আছে। মাও সেতুঙয়ের একটা কথা আছে, বিপ্লব কোন ডিনার পার্টি নয়। জুলাইয়ে সেরকম কিছুই হয়নি, অনেক কম হয়েছে। সামনের দিনে কেউ যদি আবারও ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠে আবারও গণঅভ্যুত্থান করতে হতে পারে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চিন্তাবিদ ও লেখক সলিমুল্লাহ খান বলেন, সংবিধান তো বারবার সংশোধন হয়েছে, অনেকে নতুন একটা সংবিধান নিতে ভয় পাচ্ছেন। মনে হচ্ছে সংবিধান নতুন করে করলে দেশ বঙ্গোপসাগরে পড়ে যাবে।
সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘জুলাইয়ের ঘটনাকে একসময় মৌলবাদীদের বিপ্লব বলে প্রচার করা হবে। অনেকে তালেবানের বিপ্লব বলছেন জুলাইকে। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রসবোধ কম নয়, তিনি বলেছেন, আমার তো দাড়ি নেই তালেবানের সরকার কীভাবে হলাম। পৃথিবীর অন্যসব বিপ্লবের পর অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, আমাদের জুলাইয়ের পর তো তেমন করে ঘটেনি। মব মব বলে যারা চিৎকার করছেন তারা আবার আমাকে হত্যাকারীকে উৎসাহিত করছি বইলেন না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গবেষক ও লেখক সাইমুম পারভেজ বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক কর্মীরা, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন সংবাদকর্মীরা। সাংবাদিকরা ফ্যাসিস্টের পক্ষে লিখেছে বলেছে এমনটির সংখ্যা যেমন আছে, একটা বড় অংশ আছেন যারা তাদের পেশাগত দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেছেন। সেটি করতে গিয়ে হামলা ও হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর গণতান্ত্রিক জাগরণের আশাবাদ তৈরি হয়েছে৷ দলগুলো বিভেদে জড়াচ্ছে৷ তবে আলোচনা ও ঐক্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যাবে, সে রকম একটি দেশ দেখা যাচ্ছে৷ সামনের দিনে এটা বহাল থাকুক৷ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হোক পলিসির৷
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। ফারুক ওয়াসিফ বলেন. ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান সমাজের ভেতরে বহুকাল প্রভাব ফেলে যাবে। অথচ এত বড় আত্মদান নিয়ে অনেক গণমাধ্যমের মধ্যে অস্বস্তি দেখা যায়। জুলাইয়ের ইতিহাস গণমাধ্যম পুরোপুরি ধারণ করেনি ‘
তিনি আরো বলেন, ‘সমাজে-রাজনীতিতে এখনো জুলাইয়ের আগুন থাকলেও সেটা সবচেয়ে অস্পষ্ট গণমাধ্যমে৷ গণহত্যার সমর্থকদের এখনো গণমাধ্যমে দেখা যায়।’ ফ্যাসিবাদের পক্ষের গণমাধ্যমের অনুতাপহীনতা তাদের প্রতি মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে রাখছে কি না, এই প্রশ্ন রাখেন ফারুক ওয়াসিফ।
আলোচনা সভায় সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন পিআইবি পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম। পাঁচটি প্রকাশনার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন পিআইবির জ্যেষ্ঠ প্রশিক্ষক গোলাম মোর্শেদ। সভা পরিচালনা করেন সহুল আহমেদ। সভায় পিআইবি’র ফ্যাক্টচেক টিম বাংলাফ্যাক্টের ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়।